Sunday, October 12, 2014

বাবার আদর মাইমুনা জন্য কালসাপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল


বাবার আদর মাইমুনা জন্য কালসাপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল


১২অক্টোবর ১৪ইংঃ-ঘুমের ঘোরে দেড় মাস বয়সী সৎবোন কিফতিয়ার গায়ে পা তুলে দিয়েছিল ৬ বছরের মাইমুনা। ব্যথা পেয়ে কিফতিয়া কেঁদে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গেই হেঁচকা টানে মাইমুনার পা এনে কামড় বসিয়ে দেন শারমিন। ব্যথায় চিৎকার করে উঠলে মাইমুনার মুখে বালিশ চেপে ধরেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই মাইমুনা নিস্তেজ হয়ে যায়।
পুলিশের কাছে এভাবে সৎমেয়েকে হত্যার বর্ণনা দিয়েছেন সুমাইয়া ইসলাম শারমিন। তিনি বলেছেন, বালিশ চাপায় মাইমুনা নিস্তেজ হয়ে পড়লেও রাগ না কমায় তার ঘাড় মটকে দেই। পুলিশ জানায়, গ্রেফতারের পর প্রথমদিকে মুখ না খুললেও শুক্রবার রাতভর অব্যাহত জিজ্ঞাসাবাদের মুখে শারমিন নির্মম ওই হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন। ঘটনার বর্ণনা দেয়ার পরক্ষণই আবার ‘মাইমুনাকে জিনে মেরেছে’ বলে দাবি করেন।
শুক্রবার ভোরে রাজধানীর ধলপুরের একটি বাড়ির বাথরুমের পানির ড্রাম থেকে ঘাড় মটকানো ও হাত ভাঙা অবস্থায় ৬ বছরের ছোট্ট শিশু মাইমুনার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মাইমুনার সৎমা সুমাইয়া ইসলাম শারমিনকে গ্রেফতার করা হয়।
এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে দ্বিতীয় স্ত্রী সুমাইয়া ইসলাম শারমিনের নাম উল্লেখ করে যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন আবদুর রাজ্জাক। শনিবার এই মামলাতেই গ্রেফতার দেখিয়ে শারমিনের ৭ দিনের
রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার মাইমুনার লাশ মাদারীপুরে গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
যাত্রাবাড়ী থানার ওসি অবনী শংকর কর বলেন, কয়েকদিন আগে সিজার অপারেশনে কন্যাসন্তান জন্ম দেন শারমিন। এখনও তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। এ কারণে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে। প্রথমদিকে তিনি কোনো কিছু জানেন না বলে অনড় অবস্থানে থাকলেও মাঝে-মাঝে অবস্থান পরিবর্তন করছেন। আমরা আশাবাদী, প্রকৃত ঘটনা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জানা যাবে।
এদিকে সৎমা শারমিন ছাড়াও নিহত মাইমুনের বাবা আবদুর রাজ্জাক এবং দাদি ফুলজাহান বেগমকেও শুক্রবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের মুখে সত্তরোর্ধ্ব ফুলজাহান বেগম পুলিশকে বলেছেন, এর আগেও শারমিন দুই দফা মাইমুনাকে হত্যার চেষ্টা করেছেন। শুক্রবার ভোরে বাথরুমে যে পানির ড্রামে মাইমুনার লাশ পাওয়া যায় গত সপ্তাহে ওই ড্রামের ভেতর উল্টো করে চুবিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তিনি বিষয়টি দেখে ফেলায় মাইমুনা ওই যাত্রা বেঁচে যায়। মাসখানেক আগেও শারমিন আরও একবার গলায় গামছা পেঁচিয়ে মাইমুনাকে হত্যার চেষ্টা করেন। সেবারও দাদি দেখে ফেলেন। দুটি ঘটনাই তিনি তার ছেলেকে জানিয়েছিলেন। ওই ঘটনার পর থেকেই মূলত মাইমুনাকে চোখে-চোখে রাখতেন ফুলজাহান বেগম। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। বৃহস্পতিবার রাতে সৎমায়ের নৃশংসতায় ঘুমের ঘোরেই প্রাণ যায় ৬ বছরের ছোট্ট শিশু মাইমুনার।
সত্তরোর্ধ্ব ফুলজাহান বেগম পুলিশকে আরও বলেছেন, শারমিন ?প্রায়ই মাইমুনাকে মারধর করত। মাইমুনা ছোটখাটো কোনো অপরাধ করলেই তুলকালাম বাঁধিয়ে দিত। তার সব বায়না ছিল দাদির কাছে। অন্যদিকে বাবার আদর বেশি পেত মাইমুনা। এটাও তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আবদুর রাজ্জাক তার আগের ঘরের সন্তানকে বেশি আদর করায় শারমিন ক্ষুব্ধ ছিলেন। এর সঙ্গে সম্প্রতি মাইমুনার নামে সাত লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট রিসিপট (এফডিআর) আছে জানতে পেরে তিনি ক্রোধে ফেটে পড়েন।
জানা গেছে, শারমিনের আগেও একটি বিয়ে হয়েছিল। অতিরিক্ত বদ মেজাজি হওয়ায় ওই ঘর টেকেনি। ওই ঘরের দুই সন্তান তাদের বাবা কালিম মিয়ার কাছেই থাকে।